Friday, July 6, 2012

বাংলাদেশের কৃষিঃ আজকের চ্যালেঞ্জ ও পরামর্শ

-আবুল কাইয়ুম আহম্মদ
একটি দেশের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি হচ্ছে গাছের ন্যায়কৃষি তার মূল, শিল্প তার পাখা এবং বাণিজ্য তার পাতামূলে কোনো ত দেখা দিলে গাছটাই ধ্বংস হয়ে যায়”- চীনা এ প্রবাদটি বাংলাদেশের জন্য খুবই অর্থবহকারণ এদেশের মাটির উর্বরতা, বৃষ্টিপাতের পরিমিতি, সমতল ভূ-প্রকৃতি প্রভৃতি অনুকূল অবস্থা বিদ্যমান থাকায় কৃষিকাজের হার সর্বাধিকএছাড়া শিল্পায়নের ক্ষেত্র্রেও বিশেষ করে কৃষিজাত শিল্পের প্রধান উপাদানই কৃষিপণ্যকৃষির উন্নয়ন হলেই কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন তথা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন হবেদেশের মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৪৮.৪ ভাগ কৃষিখাতে নিয়োজিত (শ্রমশক্তি জরিপ বিবিএস, ২০০৫-২০০৬)অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০০৮ অনুযায়ী, বাংলাদেশের শ্রমশক্তির প্রায় ৪৯.৫ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত এবং জিডিপিতে এ খাতে অবদান ২০.৮৭ শতাংশমূলত এদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবকাঠামো তথা জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি বহুলাংশে কৃষির উপর নির্ভরশীল

মানুষের মৌলিক চাহিদা বলতে প্রধানত খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান বোঝায়এ তিনটি চাহিদা পূরণ হয় কৃষির মাধ্যমেমানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজনখাদ্য মূলত কৃষি হতে আসেশরীরের ক্ষয় পূরণ, স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং কর্মশক্তির জন্য মানুষ সম্পূর্ণভাবে খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতাই প্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্য এদেশের জনগণ সে কৃষিকে আঁকড়ে আছে যুগ যুগ ধরে

আমাদের কৃষি ফসল প্রধানত দুপ্রকার যথাঃ খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসলখাদ্য শস্যের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ধান আর অর্থকরী ফসলের
মধ্যে প্রধান পাটএছাড়া রয়েছে গম, ভূট্টা, বিভিন্ন কলাই, তিল, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, মটর এবং তরিতরকারী ও শাকসবজিঅর্থকরী অন্যান্য ফসলের মধ্যে রয়েছে তুলা, তামাক, চা, চামড়া এবং শিল্প দ্রব্যের কাঁচামালতাছাড়া ফল-মূল, মাছ-মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি আমরা কৃষিজাত দ্রব্য থেকে পেয়ে থাকিবাঙ্গালীর প্রধান খাদ্যই হল ভাত, আর এ ভাতের মূল উপকরণই হল ধানবাংলাদেশের সমূদয় আবাদী জমির প্রায় তিন চতুর্থাংশে ধানের আবাদ হয়ে থাকে

পাটকে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হতএক সময় পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ পাট বাংলাদেশে উপন্ন হতোএখন সোনালী আঁশের সে যৌবন নেইযদিও পাঠের নতুন জাত আবিস্কার হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এর প্রাণচঞ্চলতা ফিরে পাবার সম্ভবনা রয়েছে

আদিম সমাজে খাদ্য উপাদন নিশ্চিত হওয়ার পর সমাজের সকল ব্যক্তিই খাদ্য উপাদনে সরাসরি নিয়োজিত থাকল নাঅনেকে কাপড় বুনন, মৃপাত্র তৈরী, এমন সব অন্যান্য অকৃষি পেশায় নিয়োজিত থাকলেও তাদের কাঁচামাল শতভাগ কৃষির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লএভাবে ধীরে ধীরে জীবিকা নির্বাহের পদ্ধতিও পরিবর্তন হতে থাকলোকালক্রমে পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা আধুনিক কৃষি সমাজে পদার্পণ করিকালের স্রোত ধারায় কৃষির উপর নির্ভর করে গোটা বিশ্ব আজ অপ্রতিহত গতিতে ছুটে চলেছে উন্নয়নের স্বর্ণ শিখরের পথেবিজ্ঞানের বৌদলতেই আজ উষ্ণ মরু হয়েছে সরস ও উর্বর, উচু-নিচু পাহাড়ের বন্ধুর ভূমি পরিণত হয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত সমভূমিতে, নদী পেয়েছে নতুন গতিশুকনো ক্ষেতে চলছে জলসিঞ্চনচীন, জাপান, জার্মানি, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকে আজ উন্নত দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়মিশর, মালেশিয়া, তুরস্ক উন্নয়নশীল দেশকৃষির উপর ভিত্তি করে শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে আজ তারা এ পর্যন্ত এসেছেচ্যালেঞ্জে তারা শতভাগ এগিয়েকৃষি আমাদের প্রাণ, কৃষি আমাদের ধ্যান-জ্ঞান ও সাধনাএদেশের মাটির উর্বরতা, বৃষ্টিপাতের পরিমান, সমতল ভূ-প্রকৃতি প্রভৃতি অনুকুল অবস্থা বিদ্যমান থাকার পরও বাংলার কৃষি আজও সেই তিমিরেই অবস্থান করছেযুগ-তরঙ্গ এদের মাঝে কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেনিনতুন প্রজন্ম সবই পারেআমাদের ওই নতুন প্রজন্ম উন্নত বিশ্বের সাথে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির সাথেওই প্রজন্ম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি কলেজ ও সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে কৃষি ক্ষেতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেআমরা এক্ষেত্রে সফল হবই

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে নিম্নের চ্যালেঞ্জ ও পরামর্শ গুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই আমরা কৃষিক্ষেত্রে আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে সম হব

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও নানারকম সমস্যার কারণে কৃষি উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে নাএসব সমস্যাগুলো দূর করার জন্য অবশ্যই বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবেবাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নততর করার জন্য যে সমস্ত পথ-পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত সেগুলো নিম্নরূপ-

আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উপাদন বৃদ্ধি করতে হলে কৃষকদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিতি করে তুলতে হবেদেশের অধিকাংশ কৃষক অশিতিযারা সামান্য কিছু শিতি তারাও কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত নয়ডিপ্লোমা কৃষিশিক্ষা, বয়স্ক কৃষিশিক্ষা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কৃষি প্রশিণ ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষকদের কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিতি করে গড়ে তুলতে পারলে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রসার ঘটবেশিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে ব্যাপক ও অবিরাম গবেষণার মাধ্যমে কৃষি সমস্যার সমাধান, নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উন্নয়ন সম্ভবআধুনিক প্রযুক্তি ও সমস্যার সমাধানগুলো কৃষকদের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক বিস্তৃত ও সঠিক কার্যকরী সম্প্রসারণ কর্মসূচি

উত্তরাধিকার সূত্রের কারণে ভূমি খণ্ডখন্ড হওয়াকে যেকোনভাবে রোধ করে ভূমির আকার বড় করার ব্যবস্থা করতে হবেঅত্যাধিক আইলের কারণে জমির পরিমাণ কমার সাথে সাথে চাষাবাদ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়তাই কৃষি যান্ত্রিকীকরণের স্বার্থে জমির খণ্ড-বিখণ্ডতা রোধ করতে হবে
আমাদের দেশের কৃষক সমাজের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ফসল উপাদনের জ্ঞান দান করে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবেএ উদ্দেশ্যে প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ স্বল্পমূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবেপ্রদর্শনী প্লটের ব্যবস্থা করতে হবেসঠিক সময়ে সার সুষম মাত্রায় ব্যবহার করে ফসলের উপাদন বাড়ানো সম্ভবতাই সময়মত বিভিন্ন জৈব ও অজৈব সার ফসলের ক্ষেতে ব্যবহার করতে হবেআধুনিক প্রযুক্তির সেচযন্ত্র ব্যবহার করে ফসলের উপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো সম্ভবআমাদের উপাদিত ফসলের এক বিরাট অংশ প্রতি বছর পোকামাকড় ও রোগবালাই দ্বারা নষ্ট হয়সময়মত ও পরিমিত মাত্রার কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারলে ফসল উপাদন বাড়ানো যায়বর্তমানে রাসায়নিক কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানোর জন্য সমন্বিত বালাই দমন পদ্ধতির প্রচেষ্টা চলছেএই পদ্ধতিতে উপকারী পোকামাকড় রক্ষা করে যান্ত্রিক ও জৈবিক পদ্ধতিতে কীট ও বালাই দমন করা যাবেএ পদ্ধতি প্রচলনের মাধ্যমে পোকামাকড় দমন করে ফসলের সর্বোচ্চ ফলন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে

বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল চালু করে বিশ্বের বাজারের যেন আমাদের পাটের চাহিদা বাড়ে সে জন্য বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবেআমাদের দেশে পাট চাষিরা যাতে পাটের ন্যায্যমূল্য পায় সেদিকে সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, পাটের বহুমূখী ব্যবহার বাড়াতে হবে

পাদিত কৃষিপণ্য যাতে শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় তার জন্য কৃষিপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিকল্পে শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবেবিভিন্ন পচনশীল ফল ও শাকসবজি সুষ্ঠুভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করা গেলে চাষীরা এসব পণ্য উপাদনে আগ্রহী হবেতাছাড়া প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যদ্রব্য উপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আয়তনের খামারের উপাদন ব্যবস্থাপনা, ক্ষতা এবং ফসলের নিবিড়তা বড় খামারের চেয়ে বেশিএজন্য ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে বড় খামারের জমি ভূমিহীন ও ক্ষুদ্র খামার মালিকদের দেয়া হলে উপাদন ব্যবস্থাপনা, ক্ষতা এবং ফসলের নিবিড়তা বেশি হবেশুধু তাই নয়, এতে সম্পদের সুষম বন্টনের ফলে সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধান হবে

আধুনিক প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের মূলধন যোগাড় করার সঙ্গতি এদেশের অধিকাংশ কৃষকের নেই বললেই চলেতাই কৃষকদের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য তাদের সহজশর্তে ঋণদানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে তারা কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি, বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ ইত্যাদি সময়মত ক্রয় করতে পারে
কৃষকেরা তাদের উপাদিত ফসলের নায্যমূল্য না পেলে উপাদনের উসাহ হারিয়ে ফেলেফলে উপাদন কমতে থাকেকৃষকের ঘরে যখন ফসল ওঠে তখন দাম থাকে সবচেয়ে কম এবং কৃষকের ফসল যখন ফাড়িয়া-মহাজনদের গুদামে পৌছে যায় তখন মূল্য হয় সবচেয়ে বেশিউল্লেখ্য কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগী সম্প্রদায় উপাদনের সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন হলেও তারা দীর্ঘদিন যাবত কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে লাভের বেশিরভাগ অংশ ভোগ করছেকৃষকেরা যাতে তাদের উপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে

আমাদের দেশের বেশকিছু এলাকা এখনো জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে; যেমন- বিল ডাকাতিয়াএছাড়া সাময়িক জলাবদ্ধতার কারণেও অনেক ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেএসব জলাবদ্ধতার হাত হতে ফসল রক্ষা করার জন্য প্রথমত মানুষকে সম্ভাব্য ক্ষতির ব্যাপারে সচেতন করে তোলা দরকারদ্বিতীয়ত. ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সংগঠিত করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের ব্যবস্থা নেয়া দরকার
[[[

আমাদের দেশের কৃষির উন্নতি সাধন করতে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা অবশ্যই কমাতে হবেএজন্য বন্যা সমস্যার সমাধান, জলসেচ ও জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিতে হবে
কৃষির উন্নতির জন্য আধুনিক উপকরণ বিতরণ, আধুনিক যন্ত্রপাতির ওপর প্রশিক্ষণ এবং কৃষক ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য কৃষি প্রশাসনকে আরো গতিশীল ও কর্মময় করে তুলতে হবে

সরকারি পদক্ষের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে কীটনাশক ওষুধ সরবরাহ করে কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে হবে

আবাদযোগ্য জমি বের করার লক্ষ্যে সুষ্ঠুভাবে জমি জরিপের ব্যবস্থা করতে হবেপাদনের বিবিধ উপাদানের শ্রেণীবিন্যাস করে কোন জমিতে কী পরিমাণ ফসল উপাদন করা সম্ভব তা নিশ্চিত করতে হবেএজন্য জরিপ কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন

দেশের উপাদনের গতিকে ত্বরান্বিত করার জন্য অনাবাদি জমিগুলোকে চাষের আওতায় আনয়ন করে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হবেফলে দেখা যাবে উপাদনের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় অনেকগুণ বেড়ে গেছে

বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে এবং অন্যান্য উপায়ে মাটি য় হয়ে মাটির উপাদন মতাকে হ্রাস করে ফেলেতাই যেকোনো প্রকারে হোক মাটির য়রোধ করতে হবে
আমাদের দেশের কৃষিপণ্য প্রতিবছর বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, নিম্নচাপ ইত্যাদি দ্বারা বিপুল পরিমাণে তিগ্রস্ত হয়এসব ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য শস্যবীমা প্রবর্তন, কৃষিঋণের ব্যবস্থা, রোগবালাই ও প্রতিকূল পরিবেশ, সহনশীলজাতের চাষ, বন্যাউত্তর স্বল্পমেয়াদি ফসলের চাষ ইত্যাদির ঝুঁকি ব্যবস্থা করতে হবে

কোন দেশের কৃষি উন্নয়ন করতে হলে সে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা অপরিহার্যউন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে উপাদিত কৃষিপণ্য অল্প ব্যয়ে এবং অল্প সময়ে দেশের এক প্রান্ত এমনকি বিদেশে পৌঁছানো সম্ভব হবে

পাদিত কৃষিপণ্য যেমন- ফলমূল, শাক-সবজি ইত্যাদি সহজেই পচে নষ্ট হয়ে না যায়, তার জন্য উপযুক্ত সংরণ ব্যবস্থা করতে হবেলক্ষ্যে পর্যান্ত পরিমাণে যুগোপযোগী কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন করতে হবে

মৌসুমের সময় আমাদের দেশে পর্যান্ত শাক-সবজি ও ফলমূল উপাদিত হয়খাবার চাহিদা মেটানোর পরও অনেক ফলমূল অব্যবহৃত থেকে যায় বা পচে নষ্ট হয়ফল ও সবজির বিভিন্ন প্রকার প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করে কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব

বিশ্বের ৩০টি চা উপাদনকারী দেশের মধ্যে উপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ৯ম স্থানে রয়েছেবাংলাদেশের চা পৃথিবী বিখ্যাতদেশ-বিদেশে এই চায়ের কদর বেশীউত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়ে চা উপন্ন হচ্ছেপঞ্চগড়ের  মতো বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় চা উপন্ন করা যায় কিনা তা ভাবনার বিষয় এবং ওই চা উপাদন বৃদ্ধি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানির মাত্রা সম্প্রসারণ করতে হবে

মাছ বাঙ্গালির অত্যন্ত প্রিয় খাদ্যমাছ চাষ সম্পর্কে জনগণের সঠিক জ্ঞানের অভাবেই মাছ উপাদন আশানুরূপ হচ্ছে নাদেশের ভরাট পুকুর, খাল-বিলগুলো খনন করে তা মাছ চাষের উপযোগী করতে হবেপ্রয়োজন বোধে ড্রেজার দিয়ে নদীগুলো খননের মাধ্যমে এর নাব্যতা বৃদ্ধি ও প্রবাহ সচল রাখতে হবে যাতে মাছ সাধারণভাবে বিচরণ ও বংশ বৃদ্ধি করতে পারেকলকারখানার ময়লা-আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ পড়ে নদীর পানি যাতে দূর্ষিত হতে না পারে সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবেস্য চাষীদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে হবেবড় মাছের পোনা ৬ ইঞ্চি এর ছোট হলে তা ধরা দন্ডনীয় অপরাধতাছাড়া জাটকা ইলিশ ও  অন্যান্য মাছের পোনা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ আইন সমূহ কার্যকর করতে হবেআমাদের দেশের সাড়ে তিনশ কি.মি. সমুদ্র উপকূলের বিন্বীর্ণ সমুদ্রভূমিতে নানা জাতের লোনা পানির প্রচুর মাছ রয়েছেএগুলো বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণএর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে
বাংলাদেশের গবাদি পশু পাখি গুলোর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া হাঁস-মুরগি, কবুতর, কোয়েল অন্যতমকৃষিনির্ভর এদেশে এগুলোর গুরুত্ব অপরিহার্যআমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাহিত্যে এ সব গবাদি, পশু-পাখির একটা বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছেগোস্ত ও দুধ খুব উপদেয় খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়তাছাড়া, গাড়িটানা, ধানমাড়ানো, ঘানিটানা ইত্যাদি নানা কাজে গরু, মহিষ ব্যবহৃত হয়যেহেতু পশু পাখি সম্পদের উন্নতির সাথে সাথে জাতীয় উন্নতির বিষয়টি জড়িত তাই এ ব্যাপারে গবাদি পশু-পাখির পালনে চাষিদেরকে সচেতন করতে হবে
বাংলাদেশের ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, কালো জাম, আনারস, কলা, লিচু, লেবু, পেয়ারা, আতা, কতবেল, চালতা, আমলকী, পেঁপে, তেতুল, তরমুজ, বাংগি, বাদাম, ডালিম, ডেউয়া, তাল, বিলাতি গাব, আমড়া, জামরুল, জলপাই, বরই, লটকন ইত্যাদিএসব ফলগুলোতে প্রচুর ভিটামিন রয়েছেফলের উপাদন বাড়াতে পারলে বিদেশেও তা রপ্তানি করা যাবেতাই প্রান্তিক চাষিদের ফল চাষে উদ্যোগী করতে হবেবাংলাদেশের গ্রামে প্রতিটি বাড়ীতেই ছোট ছোট জঙ্গল (বন) রয়েছে, সে জঙ্গলে প্রচুর আগাছা রয়েছে, সে আগাছা পরিস্কার করে ফলের চাষাবাদ করা যায়প্রয়োজনে প্রশিক্ষন ও সহজশর্তে কৃষকদের ঋণ দিয়ে এ কর্মসূচী চালু করা যায় বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষাবাদ হচ্ছেএগুলোর মধ্যে শাপলা, কসমস, ডালিয়া, সূর্যমুখী, গাঁদা, জিনিয়া রজনীগন্ধা বিভিন্ন ধরনের গোলাপ এগুলো অর্থনৈতিক দিক দিযে বেশ লাভজনক হওয়ায় এ দিকটির দিকেও নজর দিতে হবে

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশকৃষিই এদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ডকৃষির উন্নয়ন ব্যতীত এদেশের উন্নতি সম্ভব নয়কৃষিতে বিরাজমান সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটানো সম্ভব

লিখেছেন - আবুল কাইয়ূম আহম্মদ
মোবাইল - ০১৭১৬-৩৪৯৭২৪
২০ এপ্র্রিল ২০১০ ইং